ইসলামে নারীর অধিকার এবং নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাখ্যা করণ
২০২১ সালের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ ৭ম সপ্তাহের ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা উত্তর- ইসলামে নারীর অধিকার এবং নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাখ্যা করণ নিয়ে আজকে হাজির হলাম।
এই আলোচনা সঠিকভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে তোমরা দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সপ্তম সপ্তাহের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদানকৃত ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর সমাধান/ উত্তর খুব ভালো ভাবে সম্পন্ন করতে পারবে। আমরা এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ এর ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র এসাইনমেন্টের দেওয়া নির্দেশনা সমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করে প্রশ্নে উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব যাতে তোমাদের অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে সুবিধা হয়।
এইচএসসি ২০২১ ৭ম সপ্তাহ ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট
অ্যাসাইনমেন্ট : ইসলামে নারীর অধিকার এবং নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাখ্যা করণ।
নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি) :
নিচের বিষয়গুলাে বিবেচনায় রেখে লিখতে হবেঃ-
- নারীর অধিকার সম্পর্কে ধারণা
- ইসলামে নারীর অধিকারসমূহ
- কুরআন ও হাদিসের আলােকে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সঠিক ধারণা।
- নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পন্থাসমূহ
- নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রয়ােজনীয়তা
- নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে অনুপ্রাণিত হওয়া।
এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ ৭ম সপ্তাহের ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা উত্তর
ক) নারীর অধিকার সম্পর্কে ধারণা
ইসলামের শুরুর যুগে আরবের সামাজিক ও নৈতিক অবস্থা এত নিম্নস্তরে ছিল যে, কন্যা সন্তানের জন্ম ছিল আরব সমাজে অভিশাপ স্বরূপ। এ অভিশাপ দূর করার জন্য পিতা তার কন্যাকে জীবন্ত কবর দিত। ইসলাম এ ঘৃণ্যতম অবস্থা হতে নারী জাতিকে কল্যাণময়ী ও পূণ্যময়ী রূপ দিয়ে গৌরবের সর্বোচ্চ উচ্চ আসনে উন্নত করেছেন।
মোট কথা এ কথা দ্যর্থহীনভাবে বলা যায়, ইসলাম জাহেলি যুগে এসে নারীকে অনন্য মর্যাদায় সমাসীন করেছে। আবার নারী জাতির প্রতি বৈরি আচরণকারীদের দিয়েছে কঠোর হুশিয়ারি। ইসলামের মতো নারীর এ মর্যাদা অন্য কোনো ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠী দিতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ বলেন,
‘হে ঈমানদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং তাদেরকে আটকে রেখো না। যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ, তার কিয়দংশ নিয়ে নাও, কিন্তু তারা যদি কোন প্রকার অশ্লীলতা করে! নারীদের সঙ্গে সদভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়তো তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন।’ সুরা নিসা,আয়াত ১৯।
ইসলামে নারীর অধিকার এবং নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাখ্যা করণ
সমাজের নারীদেরকে পুরুষের মতো মূল্যায়ন করার জন্য কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন,
‘তারা হচ্ছে তোমাদের জন্যে পোশাক এবং তোমরা হচ্ছ তাদের জন্যে পোশাক।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৭।
নারী-পুরুষের মধ্যে আমলের প্রতিদানের দিক থেকেও কোন পার্থক্য নেই। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন,
‘পুরুষ বা স্ত্রী যে লোক নেক আমল করবে ঈমানদার হয়ে সে বেহেশতে দাখিল হতে পারবে, এ ব্যাপারে কারো প্রতি এক বিন্দু জুলুম করা হবে না।’ সুরা নিসা,আয়াত ১২৪।
স্বামী স্ত্রীর একজনের ওপরে অন্যজনের অধিকার রয়েছে। স্ত্রীর যেমন হক রয়েছে তেমনি স্বামীরও হক রয়েছে। কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে,
‘স্ত্রীদেরও তেমন অধিকার রয়েছে যেমন স্বামীদের রয়েছে তাদের ওপর এবং তা যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।’ সুরা বাকারা,আয়াত ২২৮।
যখন পৃথিবীতে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া অপরাধ ছিল তখন ইসলাম এসে কন্যা সন্তানের মর্যাদা বর্ণনা করেছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ইসলামে নারীর অধিকার এবং নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাখ্যা করণ
‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকে বা তিনটা বোন থাকে বা দুটি কন্যা থাকে বা দুটি বোন থাকে; আর সে তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন করে ও তাদের ব্যাপারে (অন্তরে) আল্লাহর ভয় রেখে কাজ করে; তার বিনিময় সে চিরস্থায়ী জান্নাতে পৌঁছে যাবে।’ তিরমিজি।
নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে ইসলাম উদ্বুদ্ধ করেছে। এমনকি ভালো ব্যবহার করার জন্য নবিজি উম্মতদের থেকে প্রতিজ্ঞাও নিয়েছেন। হাদিসে এসেছে,
‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা নারীদের সাথে ভাল ব্যবহার করার ব্যাপারে ওসিয়ত গ্রহণ কর।’ বুখারি, হাদিস নং ৩৩৩১।
অন্য হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম।’ সুনানে তিরমিজি ৩৮৯৫।
এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামে নারীদের মর্যাদার কথা লক্ষ্য রেখেছে।
খ) ইসলামে নারীর অধিকারসমূহ
নারীদের তালিম তালবিয়ার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আছে,
‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)।
মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন,
‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’
তিনি আরও বলেন,
‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও (উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করো)।’
হাদিস শরিফে বলা হয়েছে,
‘ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ (কর্তব্য)।’ (উম্মুস সহিহাঈন-ইবনে মাজাহ শরিফ)।
তাই হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২ হাজার ২১০, যা সব সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
নারীর আধ্যাত্মিক শিক্ষা
একইভাবে আধ্যাত্মিক মহিমা অর্জনের ক্ষেত্রেও নারীর কর্তব্য রয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এ কথা সুনিশ্চিত, যে পুরুষ ও নারী মুসলিম মুমিন, হুকুমের অনুগত, সত্যবাদী, সবরকারী, আল্লাহর সামনে বিনত, সাদকা দানকারী, রোজা পালনকারী, নিজেদের সম্ভ্রমের হেফাজতকারী এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণকারী, আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত ও প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।’ (সূরা-২২ আহজাব, আয়াত: ৩৫)।
মা হিসেবে নারীর সম্মান
ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বুখারি)।
মহানবী (সা.)-এর জামানার বিখ্যাত এক ঘটনার কথা আমরা জানি। মায়ের সেবা করার কারণে হজরত ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয় নবীর জামানায় থেকেও সাহাবি হতে পারেননি। একবার ওয়াইস করনি (রা.) নবীজির কাছে খবর পাঠালেন ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ, এখন আমি কী করতে পারি?’ নবীজি (সা.) উত্তর পাঠালেন, ‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সঙ্গে সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি।’ নবীজি (সা.) তাঁর গায়ের একটি মোবারক জুব্বা ওয়াইস করনির জন্য রেখে যান। তিনি বলেন, মায়ের খেদমতের কারণে সে আমার কাছে আসতে পারেনি। আমার ইন্তেকালের পরে তাকে আমার এই জুব্বাটি উপহার দেবে। জুব্বাটি রেখে যান হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে। এবং প্রিয় নবী (সা.) বলেন, হে ওমর! ওয়াইস করনির কাছ থেকে তুমি দোয়া নিয়ো।
কন্যা হিসেবে নারীর সম্মান
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’ হাদিস শরিফে আরও আছে, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’
বোন হিসেবে নারীর সম্মান
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কারও যদি কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।’ হাদিস শরিফে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন।
স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)। স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।’ (মুসলিম শরিফ)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে–ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। কোরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত ২২৮)।
বিধবার অধিকার ও সম্মান
বিধবাদের অধিকার সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যারা বিধবা নারীর ভরণ–পোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নামাজি ও সদা রোজা পালনকারী। (বুখারি ও মুসলিম)।
গ) কুরআন ও হাদিসের আলােকে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সঠিক ধারণা
ইসলামে নারীদের প্রভূত সম্মান দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রিয়নবি (সা.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে সারা বিশ্বজগৎ বিশেষ করে আরব সমাজ অজ্ঞতা ও বর্বরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সে সময় নারীদের কোনো মানমর্যাদা ছিল না। তাদের কোনোরূপ অধিকার স্বীকৃত ছিল সময় নারীদের দ্রব্যসামগ্রী মনে করা হতো। তাদের ক্রীতদাসী হিসেবে বাজারে কেনাবেচা করা হতো তারা ছিল ভোগ্যপণ্য, আনন্দদায়ক, প্রেমদায়িনী, সকল ভাঙনের উৎস, নরকের দরজা, অনিবার্য পাপ ইত্যাদি নামে খ্যাত। এমনকি কোনো সভ্যতায় তাদের বিষধর সাপের সাথে তুলনা করা হতো। অনেক সময় নারীদের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো না। তৎকালীন আরবের লোকেরা কন্যা সন্তানের জন্মকে অপমা জনক মনে করত ও কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দিত। আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তাদের এ হীন কাজের কথা উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন-
وإذا بشـر أخـدهـم بـالأنـثـى قـل وجهه مسودا وهو گية। يتوارى مـن الـقـوم مـن سـوء ما بشر به اینکه عـلى هـون ـم يـدشة في الغراب الآسـاءمـايخكمون।
অর্থ : “যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সুসংবাদ দেওয়া হতো, তখন তাদের চেহারা কালো হয়ে যেত, আর সে হয়ে পড়ত ক্লিষ্ট মানসিকতাসম্পন্ন। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছে থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। তাদের সে বিচার কত না জঘন্য।” (সূরা নাহল : ৫৮-৫৯)
ইসলাম নারীদের এহেন অবমাননাকর অবস্থা থেকে মুক্তি দান করেছে। ইসলামই সর্বপ্রথম নারীদের অধিকার ও মর্যাদার ঘোষণা দান করেছে। জীবনের নানা ক্ষেত্রে নারীদের অবদান ও ভূমিকার স্বীকৃতি প্রদান করেছে। মানুষকে নারীর প্রতি সম্মানবোধের আদেশ করেছে। নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন সফলতা লাভের দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।
মাতার মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে রাসুলের একাধিক হাদিস বিদ্যমান। “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।” এছাড়া তিনি (সা.) বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পরে সবচেয়ে অধিক সম্মান, মর্যাদা ও সদ্ব্যবহার পাবার যোগ্য হলেন মাতা। এছাড়াও রাসুল (সা.) জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে পর পর তিন বার বলেন, “তোমার নিকট অধিক হকদার হলেন তোমার মাতা।” রাসুল (সা.) তাঁর দুধমাতা হালিমার সাথে উত্তম ব্যবহার করতেন। একবার হালিমা (রা.) আসলে রাসুল (সা.) তাঁর নিজের গায়ের চাদর বিছিয়ে তাঁকে বসতে দেন। এভাবেই ইসলাম মাতা হিসেবে · একজন নারীকে পূর্ণ অধিকার ও মর্যাদার আসনে বসিয়েছে।
ইসলামের আগমনের পূর্বে জাহিলি সমাজে স্ত্রী হিসেবে নারীদের কোনো মর্যাদা ও অধিকার ছিল না। ইসলাম স্ত্রীকে স্বামীর সমমর্যাদা প্রদান করেছে। স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ করা, তাদের ভরণপোষণ ও বাসস্থানের
ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন—
ولهن مثل الذي عليهن بالمغرون
অর্থ : “নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার রয়েছে যেমন আছে তাদের ওপর পুরুষদের।” (সূরা বাকারা : ২২৮)
“নারীগণ তোমাদের ভূষণ আর তোমরা তাদের ভূষণ।” (সূরা বাকারা : ১৮৭)
রাসুল (সা.) তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণে স্ত্রীদের অধিকার নিশ্চিত করে বলেন, “তোমরা স্ত্রীদের উত্তম ব্যবহার করবে।”
ইসলাম কন্যা সন্তানকে ইজ্জত দিয়েছে; যে যুগে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলার রেওয়াজ ছিল। সে ইসলাম কন্যা সন্তানকে এতখানি গুরুত্ব দিয়েছে যে, কন্যার পিতাকে রাসুল (সা.) বেহেশবাসী হবার সুং দিয়েছেন৷ কন্যা বড় হওয়ার পর তাকে সুশিক্ষা দেওয়ার আদেশ এবং তাগিদ স্পষ্টভাবে ইসলাম ঘোষণা ক আল-কুরআন এ কাজকে ফরয বলেছে।
মহানবি (সা.) বলেন—
العلم فريضة على كل مسلم ومسلمة
অর্থ : “নারী-পুরুষ সকল মুসলমানের ওপর বিদ্যার্জন করা ফরয।” ইসলামি আইন ব্যবস্থায় বালেগ হওয়া নারীকে বিবাহের অধিকার দিয়েছে। কতিপয় সহজ বিধিনিষেধের অধীনে থেকে সে যেকোনো পুরুষকে। করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেন
مشلوهن أن يـنـكـخـن أزواجهن।
অর্থ : “তোমরা মহিলাদেরকে স্বীয় স্বামী নির্বাচন করে বিয়ে করাতে বাধা প্রদান করো না।” ইসলাম শুধু বৈ সম্পর্কের নির্দেশ দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি; বরং নারীকে একটি সম্মানজনক মোহরানা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। নারীজাতির অনুকূলে ইসলামের একটি শ্রেষ্ঠ অবদান। মোহরানা সম্পর্কে আল করআনের নির্দেশ হলো—নারীজাতির অনুকূলে ইসলামের একটি শ্রেষ্ঠ অবদান। মোহরানা সম্পর্কে আল কুরআনের নির্দেশ হলো—
النساء صدقتهن يـخـلـة فـان طـبـن تـكـم عـن شـيـي نـنـه تفشانكلوه هنيئامريايا।
অর্থ : “এবং তোমরা নারীদেরকে তাদের মো স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে; সন্তুষ্টচিত্তে তারা মোহরের অংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে করবে।” (সূরা নিসা : ৪)
ঘ) নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পন্থা
নারী প্রতি সম্মান বলতে আমরা মা-বোন এবং নিকট আত্মীয়দেরকে সম্মান করা বুঝায় না।ইসলাম সকল নারীদের কে সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়।নিচে তার তালিকা দেওয়া হলঃ
- ১.মা এর কথা শুনা যদি তা ইসলাম বিরোধী না হয়।
- ২.বোন যদি ছোট হয় তাকে স্নেহ ও তার উপযুক্ত / প্রয়োজনীয় আবদার পূরন করা।
- ৩.বোন যদি বড় হয় তাকে তার সম্মান দেখানো,,তার কথা শুনা।
- ৪.যেকোনো নারীর ক্ষেত্রে তাকানোর সময় দৃষ্টির হেফাজত করা।
- ৫.নারীদের কে বিশেষ করে স্কুল /কলেজ পড়ুয়া মেয়েদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা না বলা।
- ৬. বয়সে বড় সকলের কথা শুনা এবং ভালো ব্যবহার করা।
- ৭.বয়সে ছোট সকলকে স্নেহ করা।
- ৮. নারীর প্রতি শ্রদ্ধার গুরত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তার কাজের স্বীকৃতি দেওয়া
- ৯. সমাজের সকল কাজে নারীদের প্রাধান্য দেওয়া কিন্তু নারীর প্রতি সম্মানপ্রদর্শন করা বুঝায়।
- ১০. বিধবা,অসহায় নারীদের জন্য কিছু করা।(দান করা,,খাদ্যের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি) এসব কিন্তু হত-দরিদ্র নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে বুঝায়।
ঙ) নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা
ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ‘নিসা’ অর্থাৎ ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটির ২৬ বার উল্লেখ হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ‘নিসা’ তথা ‘মহিলা’ শিরোনামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এ ছাড়া কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান।
ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়েরই ন্যায্য অধিকার ও সমমর্যাদা স্বীকৃত। যেমন—বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও সমালোচনার অধিকার। নারী-পুরুষ পরস্পরের সহযোগী, প্রতিযোগী নয়। পরিবারে নারী-পুরুষ উভয়ই সংসারধর্ম পালন করবে এবং পারস্পরিক উন্নতির চেষ্টা করবে। স্বামী যেহেতু চাকরি বা ব্যবসায় কর্মব্যস্ত, সেহেতু গৃহস্থলে সন্তানদের লালন, সুশিক্ষা প্রদান ও চরিত্র গঠনের মতো গুরুদায়িত্ব স্ত্রীকেই পালন করতে হয়। পরিবারে শিশুর প্রতিপালনের দায়িত্ব উপেক্ষা না করে কোনো নারী যদি মেধা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সম্মানজনক কোনো চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য করে, তবে তা অতি উত্তম। স্বামীর সংসারে কর্ত্রী হিসেবে নারীর দায়িত্ব নির্ধারণ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনবর্গের এবং সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিণী।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)। স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।’ (মুসলিম শরিফ)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে–ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। কোরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত ২২৮)।
এসব দিক বিবেচনা করলে নারী সম্মানের গুরত্ব অপরসীম।
চ) নারী পুরুষ পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
নারী পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া অন্যটি ব্যর্থ।ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়েরই ন্যায্য অধিকার ও সমমর্যাদা স্বীকৃত। যেমন—বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও সমালোচনার অধিকার। নারী-পুরুষ পরস্পরের সহযোগী, প্রতিযোগী নয়। পরিবারে নারী-পুরুষ উভয়ই সংসারধর্ম পালন করবে এবং পারস্পরিক উন্নতির চেষ্টা করবে। স্বামী যেহেতু চাকরি বা ব্যবসায় কর্মব্যস্ত, সেহেতু গৃহস্থলে সন্তানদের লালন, সুশিক্ষা প্রদান ও চরিত্র গঠনের মতো গুরুদায়িত্ব স্ত্রীকেই পালন করতে হয়। পরিবারে শিশুর প্রতিপালনের দায়িত্ব উপেক্ষা না করে কোনো নারী যদি মেধা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সম্মানজনক কোনো চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য করে, তবে তা অতি উত্তম। স্বামীর সংসারে কর্ত্রী হিসেবে নারীর দায়িত্ব নির্ধারণ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনবর্গের এবং সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিণী।’ (বুখারি ও মুসলিম)
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে নারীরা স্ব স্ব যোগ্যতা ও মেধার গুণে নিজেদের কর্মসংস্থান করে নিচ্ছে, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, নারীর প্রতি কুদৃষ্টি ও অসদাচরণ করা যেন কিছু মানুষের মজ্জাগত। নারী সহকর্মীকে কোথাও সম্মান প্রদর্শনের মানসিকতা হারিয়ে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য অধিকার পর্যন্ত ক্ষুণ্ন করা হয়, যা কর্মক্ষেত্রে নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করে।
অথচ ইসলাম বিভিন্ন বিষয়ে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে নারীর অধিকারকে সম্মানজনক মর্যাদায় উন্নীত করেছে। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের ন্যায্য অধিকার, প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা না দেওয়া বা উপেক্ষা করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। নারীদের কোণঠাসা করে না রেখে তাদের উচ্চতর শিক্ষা ও উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ অবারিত করে দেওয়া দরকার। এ জন্য নারী জাতির প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও ন্যায়সংগত অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।
এটিই তোমাদের এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ ৭ম সপ্তাহের ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা উত্তর- ইসলামে নারীর অধিকার এবং নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাখ্যা করণ।
আরো দেখুন-
প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।